ইলেকট্রিক টু হুইলার ভারতের অটোমোবাইল সেক্টরে একটি তরঙ্গের সৃষ্টি করেছে, যা ক্রমবর্ধমান বেড়েই চলে যায়। যত দিন যাচ্ছে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ছে এবং পরিবেশগত উদ্বেগের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, এই সমস্ত কারণের জন্য বৈদ্যুতিক চালিত যান গুলো ধীরে ধীরে পেট্রোল চালিত গাড়ির জায়গা নিতে শুরু করেছে। কিন্তু এটি কি সত্য যে ভারতবর্ষে পেট্রল চালিত গাড়িগুলির জায়গা খুব শীঘ্রই বৈদ্যুতিক গাড়ি গুলি নিতে চলেছে?
এই প্রতিবেদনে বৈদ্যুতিক বাইকের কি সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে, ইলেকট্রিক গাড়ির এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির পার্থক্য কি কি? ইত্যাদি বিষয় নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা রয়েছে।
Table of Contents
কেন ইলেকট্রিক বাইক (EVs) এত জনপ্রিয় হচ্ছে?
ভারতের বাইকের দুনিয়ায় ইলেকট্রিক বাইক গুলো যে সমস্ত কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সেগুলি হল:
- জ্বালানির দাম: যতদিন যাবে পেট্রোলের, ডিজেলের দাম তত বাড়বে। দাম বৃদ্ধির কারণে পেট্রোল চালিত বাইকের মালিকের কাছে রক্ষণাবেক্ষণের দিকে ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াবে।
- ধূষণকম: দেশের প্রতিটি শহরে দূষণের মাত্রা প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে। যেই কারণে মানুষ পেট্রোল চালিত গাড়িগুলির বদলে ইলেকট্রিক গাড়ি চালাতে শুরু করছে। যার ফলে শহরে দূষণের মাত্রা কিছুটা হল কমতে দেখা যাচ্ছে।
- সরকারি অনুদান: ইলেকট্রিক বাইক চালালে আপনি সরকারি কাছ থেকে অনুদান পেয়ে যাবেন। FAME স্কিম থেকে এর পাশাপাশি আপনি জিএসটির দিক থেকেও কিছুটা ছাড় পাবেন।
- প্রযুক্তিগত উন্নতি: ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে অনেকটা প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত হচ্ছে, যেই কারণে উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তি এবং চার্জিং পরিকাঠামো উন্নতি হওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক বাইক ব্যবহারকারীদের অনেকটা সুবিধা হচ্ছে।
Electric Two Wheelers ব্যবহারের কয়েকটি সুবিধা
খরচ কম:
বৈদ্যুতিক বাইক ব্যবহারে সবথেকে বড় সুবিধা হল এই গাড়িগুলি কম ব্যয়বহুল, পেট্রোল চালিত গাড়ির তুলনা।
- কম চলমান খরচ: আজকের দিনে পেট্রোল বিদ্যুতের তুলনা অনেকটাই দামী। যেই কারণে আপনি বৈদ্যুতিক গাড়িতে অল্প খরচে অনেকটা দূরত্বে যাত্রা করতে পারবেন। পেট্রোল চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে যেটা হবে না।
- ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ: পেট্রোল চালিত বাইকের ঘন ঘন সার্ভিসিং প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেই কারণে পেট্রোল চালিত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে অনেকটা খরচ বেশি হয়ে পড়ে। এই দিকে Electric বাইকে নিয়মিতভাবে সার্ভিসিং এর প্রয়োজনীয়তা নেই যে কারণে খরচ অনেকটা কম।
পরিবেশ বন্ধু
E2Ws হলোই একটি পরিবেশ দূষণ শূন্য যান, যা ভারতের বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। কারণ দিল্লি এবং বেঙ্গালুর মতন শহর গুলিতে যেই পরিমাণে বায়ু দূষণ বাড়ছে, যার জন্য সেখানে ইতিমধ্যে বৈদ্যুতিক টু হুইলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
অন্যান্য সুবিধা
- স্মার্ট ফিচার: আজকের দিনে এমন অনেক বৈদ্যুতিক বাইক রয়েছে যেগুলিতে আপনি স্মার্টফোন কানেক্টিভিটি, GPS এবং রি জেনারেটিভ ব্রেকিং এর মতন নতুন নতুন ফিচারস গুলি পেয়ে যাবেন। যেখানে আপনি পেট্রোল চলিত বাইকে সচরাচর পাবেন না।
- হোম চার্জ: এই গাড়ি সব থেকে বড় সুবিধা হল আপনি বাড়িতে আপনার গাড়ি চার্জিং করাতে পারবেন, পেট্রোল চালিত গাড়িতে পেট্রোল শেষ হয়ে গেলে আপনাকে যেমন পাম্পে গিয়ে লাইন দিতে হতো এখানে আর দরকার পড়বে না আপনি ঘরে বসেই গাড়ি চার্জ করতে পারবেন।
Electric Two Wheelers অসুবিধা
ইলেকট্রিক বাইকের ক্ষেত্রে যে সমস্ত অসুবিধা গুলি প্রথমত দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হল:
সীমিত পরিসীমা
- ইলেকট্রিক বাইকে আপনি খুব বেশি দূরত্বে পারি দিতে পারবেন না। একটি সীমিত পরিসীমার মধ্যে যাত্রা করতে পারবেন। কারণ এই বাইকটি ব্যাটারি চার্জিং এর ওপর নির্ভর করে চলে। এই ব্যাটারি চলিত গাড়ি গুলো প্রতি চার্জে 70 থেকে 100 কিলোমিটারের মধ্যে যাত্রা করতে পারে।
চার্জিং পরিকাঠামো
- ভারতবর্ষে এমন অনেক জায়গা এলাকার রয়েছে যেখানে এখনো পর্যন্ত 24×7 বৈদ্যুতিক সুবিধা পাওয়া যায় না। সেই সমস্ত এলাকায় আপনি এই গাড়ি চার্জ করতে পারবেন না। যেই কারণে আপনি বইক নিয়ে যাত্রা করতে পারবেন না। এছাড়া এখনো পর্যন্ত সারা ভারতবর্ষে চার্জিং স্টেশন হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় রয়েছে।
বাইকের অত্যাধিক দাম
- ইলেকট্রিক বাইকের পেট্রোলের বাইকের দামের তুলনায় অত্যাধিক দাম হওয়ার কারণে এটি চাইলেও অনেকে কিনেতে পারে না।
ব্যাটারির খরচ
- ব্যাটারির গাড়িতে পেট্রোলের গাড়ির তুলনায় রক্ষণাবেক্ষনের খরচ অনেকটাই কম কিন্তু এই গাড়ির ব্যাটারির খারাপ হয়ে গেলে যেটি বদলাতে একটি ভালো টাকার দরকার পরে।
Electric বাইক এবং পেট্রলচলিত বাইকের মধ্যে পার্থক্য (Electric Bikes vs Petrol)
বৈশিষ্ট্য | বৈদ্যুতিক বাইক | পেট্রোল বাইক |
চলমান খরচ | কম | বেশি |
প্রাথমিক খরচ | উচ্চতর | নিম্ন |
পরিসীমা | সীমিত (70-150 km/ চার্জে) | নির্দিষ্ট নয় |
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ | কম | বেশি |
Re Filing টাইম | দীর্ঘ সময়( ৩ থেকে ৫ ঘন্টা) | কম সময় ( পাম্পে ৫ মিনিট) |
পরিবেশের ধূষণ | শূন্য | বেশি |
সরকারি সুযোগ-সুবিধা
দেশের সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে FAME- II স্কিমের শুরু করা হয়েছে। যার ফলে আপনি ই ভি কেনার জন্য সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি বাবদ অর্থ পাবেন। এছাড়া EV ব্যবহার করলে আপনি রোড ট্যাক্স থেকে মুক্তি পাবেন এবং কমে যাবে আপনার জিএসটির হার।
ভারতবর্ষে পেট্রোল চলিত বাইকের ভবিষ্যৎ
শহরাঞ্চলে পেট্রোল চলিত বাইকের বিক্রি কমতে দেখা যাচ্ছে। কারণ সেখানে জ্বালানির দাম এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্পের পছন্দের জন্য পেট্রোল চালিত বাইক কম বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেট্রোল চালিত গাড়ি গ্রামীণ অঞ্চলের প্রাথমিক পছন্দ। কারণ সেখানে বৈদ্যুতিক সুযোগ সুবিধা কম থাকার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে অসুবিধা হয়।
ভারতবর্ষে পেট্রোল বাইকের জায়গা কি ইলেকট্রিক বাইক নেবে? (Are Electric Two-Wheelers Finally Ready to Replace Petrol Bikes in India?)
শহর এলাকায় ইলেকট্রিক বাইকের বিক্রি ইতিমধ্যে বাড়তে দেখা গেছে পেট্রোল চলিত বাইকের তুলনায়। এরই পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলে পেট্রোল চালিত বাইক রয়েছে মানুষের পছন্দের তালিকায় প্রথমে। ধীরে ধীরে প্রযুক্তি যত উন্নত হবে ততই বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা ও বাড়বে। আশা করা যাচ্ছে ভারতের পরিবহন মাধ্যমের বৈদ্যুতিক গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি জায়গা নিতে চলেছে।